সকালে মংলাপোঁতার রাজবাড়ি দেখার আগে কন্যার ইচ্ছা পূরণ
জঙ্গলের প্রভাতী সৌন্দর্য দেখার জন্য একবার লেদাপোলের গভীরে একবার হাজির
হই। স্কালে জঙ্গলের এক অপরূপ রূপ। গাছগাছালির আড়াল থেকে নাম-না-জানা
পাখিদের দাকাদাকি। এই জঙ্গলে একটা পাখির দাক আমাকে সেই শৈশব থেকে টানে।
দুনিয়ার সব বিরহ ঢেলে সে ডাক জঙ্গলের পাতায় পাতায় ঘুরতে ঘুরতে মনের গভীরতম
কোনায় ঢেউ তুলে যায়। এই ডাক সেই চিরকালীন বিরহের ডাক....পিঁউ কাঁহা....পিঁউ
কাঁহা। আজীবন জঙ্গলের বুক চিরে সে ডেকে বেড়ায়। জানিনা কবে ফিরে তার সাথী।
শৈশবে কতবার তাকে খুঁজেছি। কোনদিন দেখেনি তাকে। নিজেকে পাতার আড়ালে লুকিয়ে
রেখে সে ডেকে যায়। কিছুক্ষণ গাড়ি থামিয়ে উপভোগ করি বনের দৃশ্য। তারপর ফিরে
চলি। ময়রাকাটার মোড়ে চা আর আলুর চপ নিয়ে বসে যাই একটা দোকানের সামনে। চলতি
পথে এরকম দুম করে কোথাও বসে খাওয়াটা আমার খুব পছন্দ। প্রতিদিনের সাজানো
গোছানো জীবন থেকে একটু আলাদা হয়ে যাওয়া।
বিশেষ করে দূরান্তের কোন যাত্রায় রাস্তাধারের ধাবায় চারপাই-য়ের উপর বসে ডাল-রূটি বা আচারের সাথে ডাল-ভাত। আহা! যেন অমৃত। ওখানে বসে জানতে পারি কয়েকদিন আগে যে হস্তিশাবকটিকে কুয়ো থেকে তোলা হয়েছিল সেটি এখনো ওখানে আছে। গিয়ে দেখি দড়িতে বাঁধা তার কি দুর্দশা। তার ছবিও তুলি। কিন্তু আমার কপাল খারাপ। ভাইরাস সেগুল সব নষ্ট করে দিয়েছে।
ময়রাকাটার মোড় থেকে এবার সোজা পিচের রাস্তা ধরি । এ রাস্তা গেছে খড়কুশমা। তার একটু আগেই মঙ্গলাপোঁতা। রাস্তার দুপাশে বড় বড় বটগাছ। শুনেছি এই গাছগুলোর পাতা কেটে রাজার হাতীর খাবার যোগাড় হত। সকালের রোদ তখন চাঁদাবিলা বিটের জঙ্গলের মাথায় ছড়িয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে চারদিকে ছড়ানো আছে সবুজ পান্না। জঙ্গল পার হতেই সবুজ ক্ষেত। হরিয়ালি দুচোখ জুড়িয়ে দেয়। এই অঞ্চল ধান ও আলুচাষের জন্য বিখ্যাত। গ্রীষ্মেও ফলে থাকে সোনার ধান। গ্রামগুলোর একদিকে জঙ্গল ,অন্যদিকে শিলাবতী। আবার মাঝখানে কংসাবতী প্রজেক্টের খাল। সব মিলিয়ে শস্যশ্যামলা। সবুজ ছাড়িয়ে এসে পড়ি একটা গ্রামে। এই ছোট্ট গ্রামটির নাম জ়েমোশোল। অতীত দিনের অনেক স্মৃতি বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানেই ছিল বগড়ীর গয়লানী ভানুমতী। রাজবাড়ির গয়লানী। লায়েক বিদ্রোহের শেষ নেতা বিশার স্বপ্ন সহচরী। প্রতিদিন রাজবাড়িতে দুধ দিতে যায়। কান খোলা। দেউড়ির সিপাইরা কি নিয়ে কথাবার্তা বলছে। সব শোনে কান পেতে। দুধ দিতে যাবার সময়
একটা কেঁড়ে জঙ্গলে নামিয়ে দিয়ে যায়। ওতে খাবার থাকে লুকিয়ে থাকা বিদ্রোহীদের। রাজবাড়ির কথাবার্তা শুনে ফেরার পথে খালি কেঁড়ে তুলে নেবার সময় দিয়ে আসে নতুন খবর। ব্রিটিশ সিপাই নজর রাখে তার উপর। তবুও সে থামে না। দুপুরে দই বেচার নামে বগড়ীর ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয় বিশার নির্দেশ। বিশাকে খুঁজে ফেরে বিদেশী সৈন্য। তার মাথার দাম হাঁকে ৫০০ টাকা। শনা যায় ভানুমতীকে অনুসরণ করেই তারা বিশাকে ঘিরে ফেলে। তবে জীবিত অবস্থায় তাকে ধরতে পাড়ে না। যুদ্ধ করে বীরের মৃত্যু বরণ করে বিশা। তার কাটামুণ্ড মেদিনীপুরে ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে পেশ কড়া হয়। ৫০০টাকা পুরস্কার পান রাজা ছত্রসিঙ্ঘের দৌহিত্র। ভানুমতী বিষ খেয়ে মৃত্যুবরণ করে।
ভানুমতীর গ্রাম ছেড়ে এগিয়ে যাই। অঞ্চলটি এক সময়ে জঙ্গলাকীর্ণ ছিল। এখন প্রায় ফাঁকা। ডানদিকে জঙ্গল, বাঁদিকে শিলাবতী আর মাঝখানে পিচের রাস্তা। এই রাস্তা , এই নদী, এই জঙ্গল..একদিন ছিল বিদ্রোহের আগুনে লাল। ব্রিটিশ্রাজকে বারবার নাজেহাল হতে হয়েছে
বিদ্রোহ দমনে আর সেই বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মঙ্গলাপোঁতার রাজবাড়ি। রাজা ছত্রসিংহ
ছিলেন বিদ্রোহের পুরোভাগে। সঙ্গে সেনাপতি অচল সিংহ।রাজা শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহ থেকে সরে দাঁড়ালেন। বিদেশীদের কাছে নতি স্বীকার করলেন। বৃটিশরাজ তাঁকে বন্দী করে হুদলি জেলে আটকে রাখেন। শর্ত ছিল বাকী বিদ্রোহীদের ধরিয়ে দিলে তবেই তিনি ছাড়া পাবেন।
অচল সিংহ ছিলেন অবিচল। কিন্তু তাঁরই এক সর্দার তাঁকে ধরিয়ে দেন। বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়। এরপর দায়িত্ব নেয় বিশা। এই মংলাপোঁতার জঙ্গল তাঁর বীরত্বের সাক্ষী। বিদেশীরা তাদের বলত” অসভ্য চুয়াড়” কিন্তু বগড়ীর লালমাটি আর শালের জঙ্গল তাদের বীরকাহিনী বুকে করে রেখেছে। এখনও বগড়ীর ঘরে ঘরে ভানু-বিশার কাহিনী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
বিশেষ করে দূরান্তের কোন যাত্রায় রাস্তাধারের ধাবায় চারপাই-য়ের উপর বসে ডাল-রূটি বা আচারের সাথে ডাল-ভাত। আহা! যেন অমৃত। ওখানে বসে জানতে পারি কয়েকদিন আগে যে হস্তিশাবকটিকে কুয়ো থেকে তোলা হয়েছিল সেটি এখনো ওখানে আছে। গিয়ে দেখি দড়িতে বাঁধা তার কি দুর্দশা। তার ছবিও তুলি। কিন্তু আমার কপাল খারাপ। ভাইরাস সেগুল সব নষ্ট করে দিয়েছে।
ময়রাকাটার মোড় থেকে এবার সোজা পিচের রাস্তা ধরি । এ রাস্তা গেছে খড়কুশমা। তার একটু আগেই মঙ্গলাপোঁতা। রাস্তার দুপাশে বড় বড় বটগাছ। শুনেছি এই গাছগুলোর পাতা কেটে রাজার হাতীর খাবার যোগাড় হত। সকালের রোদ তখন চাঁদাবিলা বিটের জঙ্গলের মাথায় ছড়িয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে চারদিকে ছড়ানো আছে সবুজ পান্না। জঙ্গল পার হতেই সবুজ ক্ষেত। হরিয়ালি দুচোখ জুড়িয়ে দেয়। এই অঞ্চল ধান ও আলুচাষের জন্য বিখ্যাত। গ্রীষ্মেও ফলে থাকে সোনার ধান। গ্রামগুলোর একদিকে জঙ্গল ,অন্যদিকে শিলাবতী। আবার মাঝখানে কংসাবতী প্রজেক্টের খাল। সব মিলিয়ে শস্যশ্যামলা। সবুজ ছাড়িয়ে এসে পড়ি একটা গ্রামে। এই ছোট্ট গ্রামটির নাম জ়েমোশোল। অতীত দিনের অনেক স্মৃতি বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানেই ছিল বগড়ীর গয়লানী ভানুমতী। রাজবাড়ির গয়লানী। লায়েক বিদ্রোহের শেষ নেতা বিশার স্বপ্ন সহচরী। প্রতিদিন রাজবাড়িতে দুধ দিতে যায়। কান খোলা। দেউড়ির সিপাইরা কি নিয়ে কথাবার্তা বলছে। সব শোনে কান পেতে। দুধ দিতে যাবার সময়
একটা কেঁড়ে জঙ্গলে নামিয়ে দিয়ে যায়। ওতে খাবার থাকে লুকিয়ে থাকা বিদ্রোহীদের। রাজবাড়ির কথাবার্তা শুনে ফেরার পথে খালি কেঁড়ে তুলে নেবার সময় দিয়ে আসে নতুন খবর। ব্রিটিশ সিপাই নজর রাখে তার উপর। তবুও সে থামে না। দুপুরে দই বেচার নামে বগড়ীর ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয় বিশার নির্দেশ। বিশাকে খুঁজে ফেরে বিদেশী সৈন্য। তার মাথার দাম হাঁকে ৫০০ টাকা। শনা যায় ভানুমতীকে অনুসরণ করেই তারা বিশাকে ঘিরে ফেলে। তবে জীবিত অবস্থায় তাকে ধরতে পাড়ে না। যুদ্ধ করে বীরের মৃত্যু বরণ করে বিশা। তার কাটামুণ্ড মেদিনীপুরে ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে পেশ কড়া হয়। ৫০০টাকা পুরস্কার পান রাজা ছত্রসিঙ্ঘের দৌহিত্র। ভানুমতী বিষ খেয়ে মৃত্যুবরণ করে।
ভানুমতীর গ্রাম ছেড়ে এগিয়ে যাই। অঞ্চলটি এক সময়ে জঙ্গলাকীর্ণ ছিল। এখন প্রায় ফাঁকা। ডানদিকে জঙ্গল, বাঁদিকে শিলাবতী আর মাঝখানে পিচের রাস্তা। এই রাস্তা , এই নদী, এই জঙ্গল..একদিন ছিল বিদ্রোহের আগুনে লাল। ব্রিটিশ্রাজকে বারবার নাজেহাল হতে হয়েছে
বিদ্রোহ দমনে আর সেই বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মঙ্গলাপোঁতার রাজবাড়ি। রাজা ছত্রসিংহ
ছিলেন বিদ্রোহের পুরোভাগে। সঙ্গে সেনাপতি অচল সিংহ।রাজা শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহ থেকে সরে দাঁড়ালেন। বিদেশীদের কাছে নতি স্বীকার করলেন। বৃটিশরাজ তাঁকে বন্দী করে হুদলি জেলে আটকে রাখেন। শর্ত ছিল বাকী বিদ্রোহীদের ধরিয়ে দিলে তবেই তিনি ছাড়া পাবেন।
অচল সিংহ ছিলেন অবিচল। কিন্তু তাঁরই এক সর্দার তাঁকে ধরিয়ে দেন। বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়। এরপর দায়িত্ব নেয় বিশা। এই মংলাপোঁতার জঙ্গল তাঁর বীরত্বের সাক্ষী। বিদেশীরা তাদের বলত” অসভ্য চুয়াড়” কিন্তু বগড়ীর লালমাটি আর শালের জঙ্গল তাদের বীরকাহিনী বুকে করে রেখেছে। এখনও বগড়ীর ঘরে ঘরে ভানু-বিশার কাহিনী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।